বাংলাদেশের স্মারক ব্যাংক নোট

বাংলাদেশের স্মারক ব্যাংক নোট

কিছুদিন আগেও আমরা ছিলাম স্বল্পোন্নত দেশ। এখন উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উঠেছে বাংলাদেশ, যা উদযাপিত হচ্ছে দেশজুড়ে। এরই অংশ হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৭০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক ব্যাংক নোট বেরিয়েছে। এরপর সারা দেশ থেকে ব্যাংক নোট সংগ্রাহকরা এই নোটটি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে যেমন উপস্থিত হয়েছেন তেমনি টাকা জাদুঘরে এই নোটটি এসেছে কি না খোঁজ নিচ্ছেন। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত মোট ৫টি বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে ৫টি স্মারক ব্যাংক নোট বেরিয়েছে। এই ব্যাংক নোটগুলো দিয়ে কোনো কিছু কেনাকাটা করা যাবে না। শুধুমাত্র ব্যাংক নোট সংগ্রাহকরা সংগ্রহ করবেন এবং বিশ্বের মুদ্রা জাদুঘরে এই ব্যাংক নোটগুলো প্রদর্শিত হবে।

এবার আমরা বাংলাদেশের মোট ৫টি স্মারক ব্যাংক নোটের উপর আলোচনা করব। যেখান থেকে বাংলাদেশের ব্যাংক নোটগুলো মুদ্রিত হয় সেই সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২৫ টাকার একটি স্মারক নোট ২০১৩ সালে বেরিয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান। এই নোটের প্রথম পৃষ্ঠায় কয়েকটি ব্যাংক নোট, দোয়েল পাখি, হরিণ ও সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধের ছবি মুদ্রিত হয়েছে। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসের ছবি মুদ্রিত হয়েছে।

বাংলাদেশের বিজয়ের ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১১ সালে ৪০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক নোট বেরিয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্র্নর আতিউর রহমান। প্রথম পৃষ্ঠায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় মুক্তিযোদ্ধাদের ছবি মুদ্রিত হয়েছে।

ভাষা আন্দোলনের ৬০ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০১২ সালে ৬০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোট বেরিয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্র্নর আতিউর রহমান। প্রথম পৃষ্ঠায় শহীদ মিনারের ছবি ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় ৫ জন বীরশ্রেষ্ঠের ছবি মুদ্রিত হয়েছে।

বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘরের শত বছরপূর্তি উপলক্ষে ২০১৩ সালে ১০০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক নোট বেরিয়েছে। প্রথম পৃষ্ঠায় আঠারো দশকের একজন ঘোড় সাওয়ারের ছবি ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় জাতীয় জাদুঘরের ছবি মুদ্রিত হয়েছে।

এই মার্চেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে। এ উপলক্ষে ৭০ টাকা মূল্যমানের একটি স্মারক নোট বেরিয়েছে। এতে স্বাক্ষর করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্র্নর ফজলে কবির। প্রথম পৃষ্ঠায় হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ও দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি মুদ্রিত হয়েছে। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় অত্যন্ত সুন্দরভাবে বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু ও বঙ্গবন্ধু মহাকাশ যানের ছবি মুদ্রিত হয়েছে।

এ পর্যন্ত মোট ৫টি স্মারক নোট বের হয়েছে, যেগুলো আমরা আগেই উল্লেখ করেছি। প্রতিটি নোট ইতিমধ্যেই ব্যাংক নোট সংগ্রাহকরা সংগ্রহ করেছেন। বাংলাদেশ ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা জাদুঘর পরিদর্শন করতে যে সব সম্মানিত অতিথি আসেন তাদের এই স্মারক নোটগুলো উপহার দেওয়া হয়। বিশে^র বিভিন্ন মুদ্রা জাদুঘরে বাংলাদেশের স্মারক নোটগুলো প্রদর্শিত হচ্ছে। অত্যন্ত দৃষ্টিনন্দন বাংলাদেশের স্মারক নোটগুলো বিশ্বের সব ব্যাংক নোট সংগ্রাহক ও মুদ্রা জাদুঘরগুলোর কাছে প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্বের একাধিক দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নিয়মিতভাবে স্মারক নোট বের করে যার বেশির ভাগই একই সঙ্গে রেগুলার ব্যাংক নোট হিসেবে ছাড়া হয়। অর্থাৎ কোন বিষয়কে উপলক্ষ করে স্মারক নোট বাজারজাত করা হলো সেটা সংগ্রাহক ছাড়াও সেই ব্যাংক নোট ব্যবহারকারীরাও জেনে যাচ্ছে, বিশ^বাসীও জেনে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের যে পাঁচটি স্মারক নোট বাজারে ছাড়া হয়েছে তা গ্রাহক পর্যায় পৌঁছাচ্ছে না। তার কারণ এটিকে বাজারজাতকরণ হয়নি। অর্থাৎ বাংলাদেশের স্মারক ব্যাংক নোট দিয়ে কোনো কিছু কেনাকাটা করা যাবে না। দেশবাসী জানতেও পারবে না যে, বাংলাদেশের পাঁচটি ব্যাংক নোট বের হয়েছে। যদি জানতে পারতেন তাহলে আমাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ওই ঘটনাগুলোর সঙ্গে তারাও পরিচিত হতে পারতেন। আমরা আশা করব বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি নিয়ে চিন্তাভাবনা করবেন এটা আমাদের বিশ্বাস। দিন কয়েকের মধ্যেই টাকা জাদুঘরে ৭০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোট কিনতে পাওয়া যাবে। আগের চারটি স্মারক নোটও কেনা যাবে। যদি ফোল্ডারসহ ৭০ টাকা দামের স্মারক নোটটি আপনি সংগ্রহ করতে চান তাহলে এর জন্য ২০০ টাকা ও ফোল্ডার ছাড়া নিলে ৭০ টাকা দিয়ে নিতে পারবেন।

লেখক: সৈয়দ রশিদ আলম
সাধারণ সম্পাদক, টাকা জাদুঘর ডোনার ক্লাব

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment